বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমরা বাংলাদেশীরা কি সুন্দর করে বাংলা ভাষায় কথা বলি। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছি। আসলেই কি আমরা আমাদের মাতৃভাষার সন্মান বা মর্যাদা দিচ্ছি? এইযে দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত কর্মজীবি, পেশাজীবি মানুষ আমরা কি শুদ্ধ ভাবে শুদ্ধ স্বরে সুন্দর করে বা শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলি? স্কুল কলেজের এতো যে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকমন্ডলী, তারা কি সুন্দর করে কথা বলতে পারে ছাত্রছাত্রীদের সাথে বা চারপাশের মানুষের সাথে?এখনো তো অনেকের স্বরবর্ণের উচ্চারণ, ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ কান্ধে বারি ‘ধ ‘ হাঁটু ভাঙা ‘দ’ প্যাটকাটা মদ্দেন্ন ‘ষ’ দন্তির’স’ এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
খুব অবাক করার বিষয় বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পী, সাহিত্যিক,নাট্যকার, নির্দেশক,গীতিকার, সুরকার,নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীরাও অশুদ্ধ ভাবে কথা বলে থাকে। শব্দের উচ্চারণের অবস্থা যাচ্ছেতাই। কেউ বছরের পর বছর নিজেদের শিল্পী পরিচয় দেয় জীবনচক্র শেষ করে। নিজেরাই তৈরি হতে পারে না, নতুন প্রজন্মকে কিভাবে শিখাবে।
দয়াকরে কেউ নেতিবাচক ভাবে নেবেন না ভুল হলে শিখতে হয়, শেখার কোনো বয়স বা সময় নেই। দোলনা থেকে কবর সব জায়গায় শিক্ষার প্রয়োজন আছে। ডাক্টার,ইঞ্জিনিয়ার,আমলা,আইনজীবি,বা পদস্থ সামরিক বেসামরিক ব্যক্তি, যে কোনো পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তারাও তো অধিকাংশই অশুদ্ধ ভাবে কথা বলেন।
নন্তপক্ষে প্রমিত চলিত ভাষায় কথা বলতে তো পারেন। অথচ দেখুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা কিন্তু যথেষ্ট সুন্দর করে কথা বলেন। আসুন একটু ভেবে দেখি। সচেতন হই স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, ভাষার শিল্পের সাহিত্যের সংস্কৃতির উন্নয়ন। আধুনিকতা মানেই পোশাক পরিচ্ছদ খাদ্যঅভ্যাস এর পরিবর্তন নয়, রুচি সামাজিকতা, শিষ্টাচার, পরমতসহিঞ্চুতা এসবের উন্নয়ন।পারিবারিক শিক্ষা, সভ্যতা ভব্যতা নৈতিকথা না শিখতে পারলে, বাংলাদেশ কোনদিনও একটি আধুনিক রাষ্ট্র হতে পারবে না।সময় গেলে যেমন সাধন হবেনা তেমনি আপনার শেখার, শেখানোর মন মানুষিকতা, আগ্রহ নষ্ট করে ফেললে তা কি আর হবে? ভেবে দেখুন আজকেই ।
লেখক: আনিসুর রহমান
সভাপতি
বাংলা থিয়েটার, ফরিদপুর।