1. admin@culturenews24.com : admin :
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
আমরা সারা বাংলাদেশ ব্যাপী জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দিচ্ছি। আগ্রহী প্রার্থীগণ ই—মেইল এ সিভি ও ছবি পাঠিয়ে আবেদন করতে পারবেন।E-mail: newsroom@culturenews24.com, culturenews24.com@gmail.com, Mob: 01726-860079, 01856-101610. আমরা শুধুমাত্র সংস্কৃতি বিষয়ক সংবাদ প্রচার করে থাকি। (শর্ত প্রযোজ্য) বি:দ্র: সাইট উন্নয়নের কাজ চলছে...............।
সর্বশেষ
ফরিদপুরে নকল শিশু খাদ্য ও ঔষধ কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ফরিদপুরে ছাত্রলীগের উদ্দ্যোগে বিনামূল্যে গামছা, পানি ও শরবত বিতরন ফরিদপুরে ভুয়া পশু চিকিৎসকের সাজা প্রদান ফরিদপুরে ওয়েস্টার্ন পার্কে দুইদিন ব্যাপী ফ্রি মেহেদী উৎসব দারিদ্র বিমোচন যাকাতের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ফরিদপুরে ইমামদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ ফরিদপুরে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট ও কোয়ালিফাই রাউন্ড ক্রিকেট লীগ সালথায় কৃষককে কুপিয়ে হত্যায় পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ কর্তৃক পরিবহন সুপারভাইজারের লাশ উদ্ধার ফরিদপুরে ৪২ তম জাতীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু

নূরজাহান নিজেই একজন শিল্পী ছিলেন

  • সময় : সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৪৫ বার দেখা হয়েছে।

মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং সম্রাজ্ঞী নূরজাহান – দু’জনেই শিল্পপ্রেমিক ছিলেন। বস্তুতঃ নূরজাহান নিজেই একজন শিল্পী ছিলেন। তিনি কাপড়ের ওপরে সূক্ষ্ম কারুকাজ করতে পারতেন। কাপড়ের ওপরে অনেক নকশা নাকি তাঁরই আবিষ্কার। আসলে নূরজাহান মধ্যযুগের ভারতীয় নারীর পোশাকে নতুনত্ব নিয়ে এসেছিলেন। অবশ্য তিনি মুঘল হারেমে পারসিক প্রভাবটিকে পুরোমাত্রায় বজায় রাখতে চেয়েছিলেন; তবে সেটা বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। প্রথমদিকে মুঘল হারেমের নারীরা কিংখাব ব্যবহার করতেন না। তখন তাঁরা একরঙা বা ডোরাকাটা জামা ও পাজামার ওপরে মাকড়সার জালের মত সূক্ষ্ম মসলিনের পেশওয়াজ পরতেন। বস্তুতঃ কিংখাব জিনিসটা নারীদের পোশাকের উপকরণ হিসেবেও নিতান্ত বেমানান ছিল। সেটা ভারী এবং জরির কাজের জন্য কিছুটা কর্কশ ছিল। এছাড়া তখনকার ভারতীয় নারীরা গা ভর্তি সোনা রুপোর অলঙ্কার পরতেন। তাই তাঁদের পোশাকে সোনার ফুল রুপোর পাতার বাহারের কোন প্রয়োজন হত না। কারণ, সেই দুটো মিলে নারীর রূপ তো খুলতই না, উল্টে গয়না ও পোশাক – দুটোই মাঠে মারা যেত। তাই মুঘলযুগের পুরুষেরা কিংখাবের অঙ্গরাখা পরতেন। আকবরের পরবর্তী মুঘল সম্রাটেরা – জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেব – তিনজনেই কিংখাবের সমঝদার ছিলেন। ঔরঙ্গজেব নানা ধরনের মসলিন, বিশেষ করে কাজকরা জামদানী মসলিন পছন্দ করতেন। তাঁর সময়ে – আবরোয়া নয়নসুখ ও জামদানী – উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল। চিকন কাপড়ের ক্ষেত্রেও তখন নানা ধরণের বৈচিত্র্য দেখতে পাওয়া গিয়েছিল।

শিল্পানুরাগিণী নূরজাহান অনেকগুলি কাপড় ও নকশার আবিষ্কর্ত্রী ছিলেন। তিনি একে একে – পাঁচতোলিয়া ওড়না, দুদামী পেশওয়াজ, বাদলা বা এক ধরনের কমদামী জরি, কিনারি বা লেস, আতর-ই-জাহাঙ্গিরী, নূরমহালী কিংখাব এবং আরও কত কি – উদ্ভাবন করেছিলেন। নূরজাহান পোশাকের ওপরে সূক্ষ্ম কাজ পছন্দ করতেন। অনেকের মতে চিকনের নকশাও তাঁরই আবিষ্কার ছিল। যদি একথা সত্যি নাও হয়, তাহলেও তিনিই যে সেই শিল্পটির প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিলেন – সেবিষয়ে গবেষকদের মনে কোন সন্দেহ নেই। তখন মূলতঃ বেগমদের বিবাহের সাজ জমকালো কিংখাব দিয়ে তৈরি করা হত। কিন্তু নূরজাহান ঠিক করেছিলেন যে, বিবাহের সময়ে সকলেই জমকালো জরির পোশাক পরবেন। আহা! গরীবদেরও তো একদিনের জন্য বাদশাহ-বেগম হতে ইচ্ছা করে! সেই একদিনটি বিবাহের দিন ছাড়া তাঁদের জীবনে আর কবে আসতে পারে! এটাকে সম্রাজ্ঞীর খেয়ালও বলা চলে! তাঁর না হয় কোন কিছুর অভাব ছিল না, কিন্তু তাঁর দাসীরা? তাঁকে প্রতিদিন যাঁরা সাজিয়ে দিতেন, তাঁরা কিনা নিজেরা সাজবেন না! কিন্তু সেকালে কিংখাবের পোশাক খুব দামী ছিল। তাই গরীবরা সেটা পরতেন কি ভাবে? সেই কারণে নূরজাহান অনেক ভেবেচিন্তে নিজেই একটা নকশা তৈরি করে ফেলেছিলেন। সেটা ছিল – ফাঁকার ওপরে জমকালো। তখন যেসব নকশা খুব একটা সূক্ষ্ম ছিল না, অথচ যেগুলো দিয়ে পুরো জমিটা ভরিয়ে ফেলা যেত, সেটাকে বলা হত – ফাঁকার কাজ। নূরজাহানের পরিকল্পনা মত তৈরি সেই কাপড়গুলি বুনতে কম সময় লাগত; সেগুলি দেখতে ঝলমলে হলেও তৈরি করতে পরিশ্রম কম হত বলে সেগুলোর দামও খুব কম ছিল। নূরজাহানের পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি সেই নতুন জরির পোশাকের নাম দেওয়া হয়েছিল – ‘নূরমহালী’। নূরজাহান তাঁর নিজের পরিচারিকা ও তাঁদের কন্যাদের বিবাহে ওই নূরমহালী পোশাক উপহার দিতেন। তখনকার দিনে ওই পোশাক তৈরি করতে খরচ পড়ত পঁচিশ টাকা, মতান্তরে পঁচিশ মোহর বা একশো টাকা। মজার কথা হল যে, আজও সেই রীতি কিন্তু আমাদের দেশে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পালিত হচ্ছে। অর্থাৎ, মুঘল সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের সেই সঙ্কল্প – ভারতীয় নারীর পোশাকের ব্যাপারে একটা নতুন দিগন্ত নিয়ে এসেছিল। এর আগে ভারতবর্ষে বিবাহের সাজ বলে আলাদা করে কিছু কিন্তু ছিল না। বাণভট্ট তাঁর গ্রন্থে রাজ্যশ্রীর বিবাহের বড় মাপের আয়োজনের কথা লিখলেও, সেই সাজপোশাকের স্তূপ থেকে রাজ্যশ্রীর রক্তিম পট্টবস্ত্রটিকে আলাদা করে চিনে নেওয়া যায় না, বরং তখন ভারতীয় সনাতন রীতি অনুযায়ী নারীর বিবাহের সাজ সাদা ছিল বলেই দেখতে পাওয়া যায়, এবং সেখানে ঔজ্জ্বল্যের পরিবর্তে পবিত্রতা ও সুন্দরের প্রাধান্যই বেশি ছিল। এক্ষেত্রেই নূরজাহান মধ্যযুগের ভারতীয় নারীর সাজসজ্জার ব্যাপারে বড় রকমের একটা পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই বিবাহের কনের সাজ মানেই হয়ে গিয়েছিল – জমকালো জড়োয়ার প্রাচুর্য।

তবে মুঘল আমলের জাঁকজমকপূর্ণ আড়ম্বরের মধ্যেও নারীর সাজকে রুচিসম্মত করে তুলতে নূরজাহান চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি, কিন্তু তাঁর এবং তাঁর সময়কার সাজে-প্রসাধনে অলঙ্কার হিসেবে – কোন ফুল কিংবা কচি পাতা, আধফোটা ফুলের কুঁড়ি বা পদ্মের মৃণাল – গৃহীত হয়নি। তখন এসবের বদলে তাঁরা সোনার ফুল, হীরের ফুল, দামী পাথর বসানো রুপোর ফুল ও জরির ফুল ব্যবহার করতেন।

প্রাচীন ভারতের মানুষের যে আংটি পরবার অভ্যাস ছিল, সেকথা কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ পড়লেই বুঝতে পারা যায়। শুধু সেটাই নয়, সেযুগে রাজার আংটি অনেক সময়ে অভিজ্ঞান হিসেবে ব্যবহৃত হত। মুঘলযুগে – আরশি আর ছল্লা – আঙুলের অলঙ্কার হিসেবে পরিচিত ছিল। সেগুলো মূলতঃ একটু বড় আকারের আংটি ছিল এবং তর্জনীতে পরা হত। মহিলারা সাধারণতঃ কেউই গহনা হিসেবে নিজেদের তর্জনী বা অঙ্গুষ্ঠে আংটি পরেন না; তাঁরা নিজেদের হাতের বাকি তিন আঙুলে, বিশেষ করে অনামিকায় আংটি পরেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। বেলুর মন্দিরের মদনিকার অঙ্গুষ্ঠে কিংবা ভুবনেশ্বরের নায়িকার তর্জনীতে আংটি রয়েছে বলে দেখা গেলেও, তাঁদের সংখ্যা কিন্তু বেশি নয়। এছাড়া তখন আরশিতে নিজের মুখ দেখাও চলত। সেকালে অনেক সময়ে বিষ পান করে মৃত্যুবরণ করবার জন্য আংটির পাথরের নিচে উগ্র ধরণের বিষ লুকোনো থাকত। তবে বলাই বাহুল্য যে, সেসব আয়োজন রাজা ও রাজপরিবারের লোকেদের জন্যই ছিল। কারণ, তখনকার সাধারণ মানুষের হঠাৎ করে আত্মহত্যা করবার কোন দরকার হত না, তাই সেসব আংটি তাঁদের নাগালের বাইরেই ছিল। তখন কোমর থেকে পা পর্যন্ত খুব বেশি গয়না পরবার অবকাশ ছিল না বলে ভারতীয় নারীরা নিজেদের শরীরের সেই অংশকে পোশাক দিয়ে আবৃত করে রাখতে ভালোবাসতেন, আর দেখা না গেলে গহনা পরে লাভই বা কি! মজার ব্যাপার হল যে, মুঘল আমলের হারেমে আবার ‘দেখা-গয়না’ পরবার খুব নিন্দামন্দ করা হত। অর্থাৎ, গহনা পরা হবে, অথচ সেটা দেখা যাবে না – তা কি করে সম্ভব ছিল? তখনকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীরা তাঁদের হাতে-বাহুতে গহনা পরে সেটার ওপরে একটা মসলিনের পটি জড়িয়ে রাখতেন। ফলে স্বচ্ছ মসলিনের ভেতর থেকে অলঙ্কারের দ্যুতি দেখতে পাওয়া যেত। সেযুগে শুধুমাত্র নর্তকী এবং গায়িকা, অর্থাৎ পেশাদার বাঈজীরা সরাসরি গহনা পরতেন। এজন্য সেকালে যাঁরা পুরো হাত ঢাকা জামা পরতেন – তাঁদের হাতের কিছুটা অংশ কেটে সেখানে মসলিনের টুকরো কিংবা পরবর্তীকালে নেট লাগানো হয়েছিল।

মহিলাদের কোমরে পরবার জন্য মধ্যযুগে – পাহজেব, বঞ্জর, জিঞ্জির ও ঘুংরু – এসেছিল। এক্ষেত্রে আগেকার – মেখলা, চন্দ্রহার ও কিঙ্কিণীই – তখন নিজের নাম বদল করেছিল বলা চলে। অর্থাৎ, এগুলো একই ধরণের গহনা ছিল। এছাড়া পায়ে পরবার জন্য – মল, ছানলা, চুটকি – এসব তো ছিলই। তখনকার নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের মহিলারা তাঁদের কোমরে পরবার জন্য – গোটহার ও নিমফল – ব্যবহার করতেন; এগুলো কিছুকাল আগেও প্রচলিত ছিল। এসব ছাড়া মুঘল শাহজাদী অর্থাৎ রাজকুমারীরা তখন মুক্তোর জালের চাদর ব্যবহার করতেন। ওড়নার মত দেখতে সেই মুক্তোর চাদর তাঁদের দুই কাঁধের দু’পাশে ঝুলত। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হল যে, ভারতীয় নারীদের সাজসজ্জার ইতিহাসের এই পর্বে গহনা ও সাজসজ্জায় অতিরিক্ত আড়ম্বরই চোখে পড়ে। সেকালে নারীর সৌন্দর্য নয়, নারীর শরীরে গহনার সংখ্যাধিক্যই যেন তাঁদের রূপসজ্জার ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য ছিল। ভারতীয় নারীর এই ধরণের রূপসজ্জার রেশ আধুনিক যুগের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত থেকে গিয়েছিল।

কিন্তু নূরজাহান সেই সংখ্যাধিক্যে বিশ্বাসী ছিলেন বলে মনে হয় না। ফরাসি পর্যটক বার্ণিয়েরের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, জাহাঙ্গীরের সময়কার মুঘল হারেমের পোশাক এতটাই সূক্ষ্ম হত যে, কোন কোন পোশাক তো একরাত্রির বেশিও ব্যবহার করা যেত না। সেইসব পোশাকে সোনার ঝালর, সূক্ষ্ম নকশা, রেশমের ফুল ও জরির কাজ থাকত। নূরজাহান নিজে অনেক ধরণের নকশা, কিনারি বা লেস আবিষ্কার করেছিলেন। শোনা যায় যে, সেকালের অন্যান্য অনেক জিনিসের মত তিনিই নাকি বোতামের আবিষ্কর্ত্রী ছিলেন। নূরজাহানের বোতাম আবিষ্কার করা নিয়ে একটি কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে।

কাহিনীটি এরকম –

নূরজাহান একদিন রাজদরবারে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছিলেন। মুঘল মহিষীদের মধ্যে একমাত্র তিনিই নিয়মিতভাবে রাজসভায় যেতেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। সেদিন দরবারে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত বেশবাস সম্পূর্ণ হওয়ার পরে দেখা গিয়েছিল যে, দর্জি তাঁর পোশাকের এক জায়গায় ফিতে বসাতে ভুলে গিয়েছিলেন! তখন আর পোশাক বদলাবার সময় ছিল না। সেই কারণে সম্রাজ্ঞীর একজন প্রত্যুৎপন্নমতি পরিচারিকা তাঁর নিজের কান থেকে সোনার ঝুমকো দেওয়া কুণ্ডলটি খুলে নিয়ে সেটি দিয়ে নূরজাহানের জামার দুটি প্রান্তভাগ আটকে দিয়েছিলেন। জামা আটকানোর ওই নতুন ধরণের পদ্ধতি দেখে নূরজাহান মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপরেই তিনি আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাঁর সব পোশাকে ফিতে বা পটির বদলে সেই নতুন জিনিসটি লাগাতে হবে; আর তাঁর যে পরিচারিকার কল্পনা থেকে সেটি উদ্ভূত হয়েছিল, তাঁকে তিনি শুধু পারিতোষিকই দেননি, তাঁরই নামে সেটির নাম রাখা হয়েছিল – ‘বাট্টান’।

এটিকে এখন নিছক গল্প বলে মনে হলেও একইসাথে একথাও মনে রাখতে হবে যে, নূরজাহান তাঁর সময়ে ওই ধরণের অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছিলেন। নারীর প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে তাঁর অসামান্য আবিষ্কার ছিল আতর।

শোনা যায় যে, ‘অতর-ই-জহাঙ্গীরী’ – নামের গোলাপের সুগন্ধে সুগন্ধিত আতর নাকি নূরজাহানই আবিষ্কার করেছিলেন। (আবার কিছু কিছু গ্রন্থে বলা হয়েছে যে ওই আতর নূরজাহান জননী – আসমত বেগম – আবিষ্কার করেছিলেন। উদাহরণ – Tuzuk-i-Jahangiri, p- 270-271,Gladwin’s Reign of Jahangir, p- 24) এছাড়া পেশোরাজের দুদামী (ওজনে দুই দাম – তামার ৪০ দামের মূল্য এক টাকা), পাঁচতোলিয়া (ওজনে পাঁচ তোলা), বাদলা, কিনারী এবং ফরাস-ই-চন্দনী (চন্দন-কাঠের বর্ণবিশিষ্ট কার্পেট) নাকি তাঁরই কল্পনা-প্রসূত ছিল। (পেশোরাজ – Gown, দীর্ঘঅবগুণ্ঠন – Veils, বাদলা – Brocade, কিনারী – Lace, নিচোল – Skirt, আঙ্গিয়া – Bodice) মুঘল যুগের ভারতে অভিনব আদর্শের বিচিত্র ধরণের স্বর্ণালঙ্কার ও নারী-পরিচ্ছদ প্রচলন করে নূর ইতিহাসে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন। ভারতে আপাদ-লম্বিত নিচোল-এর ব্যবহার তাঁরই হাতে প্রবর্তিত হয়েছিল। অতীতে লক্ষ্ণৌ শহরের সম্ভ্রান্ত ঘরের ললনারা যে নিচোল ব্যবহার করতেন, সেটা তাঁরই অনুকরণে। সেই সময়ে নতুন ধরণের একপ্রকারের আঙ্গিয়া তাঁরই নামে সাধারণের মধ্যে পরিচিত ও প্রচলিত হয়েছিল। ভারতে ওড়নার ব্যবহারের বিষয়ে তিনিই পথপ্রদর্শিকা ছিলেন। এই প্রসঙ্গে জাস্টিস আমীর আলী তাঁর ‘ইনফ্লুয়েন্স অফ ওমেন ইন ইসলাম’ গ্রন্থে লিখেছিলেন –

“The Begum herself introduced several improvements in ladies’ dress. The full-flowing skirt, afterwards travestied in the Court of Lucknow, the bodice which bore her name, and the pretty scarf at one time in fashion were her inventions.” (Influence of Women in Islam, Justice Ameer Ali, 1899, p. 769.) বস্তুতঃ নিজের সময়ে নূরজাহান ভারতে যে ফ্যাশনের শুরু করেছিলেন, সেটাকেই আধুনিক যুগের ফ্যাশনের মূল ভিত্তি বলা যেতে পারে।
(সংগ্রহীত)

আপনার সামাজিক মিডিয়াতে এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2023-2024 culturenews24.com    E-mail: newsroom@culturenews24.com, culturenews24.com@gmail.com
Theme Customized By BreakingNews